ফাইল ডাউনলোডঃ ইন্টারনেট থেকে আমরা যার যেই রকম রুচি সেই রুচি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম ফাইল ডাউলোড করে থাকি। ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড ব্যাপার টা অনেকেই হালকা ভাবে নিয়ে থাকে যারা প্রযুক্তির ব্যাপারে তেমন ধারণা রাখে বা ইন্টারনেট ব্যবহারে নতুন। এই জন্য ফাইল ডাউনলোড করার সময় নিজের অজানতেই তাদের কম্পিউটারে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইত্যাদি ইন্সটল করে ফেলে যা বহুত পরিমাণে ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই আজকের এই আর্টিকেল টি আলোচনা করব কিভাবে আমরা নিজেদের এবং আমাদের ডিভাইস কে ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করার সময় নিরাপদ রাখতে পারি।
Table of Contents
ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন উচিত!
ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড বিষয় টা সহজ দেখালেও এর পিছনে লুকিয়ে আছে আমাদের নিরাপত্তার কারণ যদি আমরা একটি ভুল করি তাহলে আমাদের কম্পিউটারের বা মোবাইলের তো ক্ষতি সাধণ হবে সাথে সাথে নিজেরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। ইন্টারনেট থেকে আমরা মুভি, গেম, সফটওয়্যার, পিকচার বা যেকোন কিছুই ডাউনলোড করি না কেন সব কিছুইতেই একটা ঝুঁকি থেকে যায়। আমার দেখা ফেসবুক ফ্রেন্ড রিয়াল লাইফের এমন অনেক ফ্রেন্ড দেখছি যারা ইন্টারনেট থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ফাইল ডাউলনোড করতে গিয়ে ভাইরাস আট্যাক খেয়ে বসে ছিল। এইটা ছিল এক ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার যা একবার কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে গেলে আপনি ওপেন করলে শেষ! আপনার সব ফাইলে একটা অচেনা এক্সটেনশন যুক্ত হয়ে যাবে তারপর ঐ ফাইল গুলো ওপেন করতে পারেবন না।
প্রত্যেক টা ফোল্ডারের মধে দেখতে পাবেন একটি টেক্সট ফাইল যেখানে হ্যাকার রা বলছে তাদের যদি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার তাদের কে বিটকয়েনের মাধ্যমে দিতে বলছে। আর সেই ডলার বা অর্থের পরিমাণ এটা অনেক বেশিই হয় যা জোগার করা যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় তাহলেও আপনি যে আপনার ফাইল গুলো ব্যাক পাবেন তার কোন ভরসা নাই। আপনার ফাইল গুলো কে হ্যাকার রা ইনক্রিপ্ট করে ফেলে যা ঐ উক্ত হ্যাকার ছাড়া কেউ ডিক্রিপ্ট করতে পারে না। আপনি যদি কখন এই ধরনের সমস্যায় অর্থ্যাৎ ম্যালওয়্যারের অ্যাটাক খেয়ে বসেন তাহলে কখনোই হ্যাকারদের দেওয়া ইমেল বা কোন কন্ট্যাক্টে যুক্ত হবে না এতে আরো ক্ষতির মূখে পড়তে পারেন। আপনি যে কাজ টি করতে পারেন সেটি হলো কোন আইটি বিশেষজ্ঞ কাছে যেতে পারেন আর নয়তো নতুন করে হ্যার্ড ডিস্ক টি ফরম্যাট দিয়ে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম বা উইন্ডোজ সেটআপ করা। বেশি ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভাইরাস অ্যাট্যাক খাওয়ার পর সেই সব ফাইল কোন মতোই সম্পূর্ণ রিকভার করা সম্ভব হয় না । সর্বশেষ গিয়ে নতুন করে উইন্ডোজ সেটআপ ই করতে হয়।
যদি নিজের কম্পিউটার বা ডিভাইস ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে নিচের দেওয়া টিপস এন্ড ট্রিক গুলো অনুসরণ করবেন ফাইল ডাউনলোড করার সময়-
১। অচেনা ওয়েবসাইট থেকে দূরে থাকা
ইন্টারনেট থেকে যেকোন কিছু ডাউনলোড করার জন্য আমরা লাখো ওয়েবসাইট পাবো কিন্তু তার মধ্যে আমাদের ট্রাস্টেড সাইট গুলো থেকে ফাইল ডাউনলোড করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে বুঝবে এই ওয়েবসাইট টি ভালো হবে ডাউনলোড করার জন্য এখানে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোন ভয় থাকবে না। উত্তর হলো আপনি যে টাইপের ফাইল বা মুভি ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন সেই জিনিস টার বিশ্বাস যোগ্য সাইট বের করার জন্য গুগল সার্চ করবেন ধরুণ Best Safe movie download website, Best software download site ইত্যাদি তাহলে আপনি বিশ্বাস যোগ্য সাইট পেয়ে যাবেন। যেই ব্লগ বা ভিডিও তে আপনাদের ইনফরমেশন গুলো দিয়ে থাকবে সেই সব ওয়েবসাইট গুলো অনেকেই ব্যবহার করে তারপর ব্যবহারের জন্য দিয়ে থাকে তাই কিছু হওয়ার ভয় তেমন থাকে না।
কিন্তু সমস্যা হয় যখন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ফাইল টি আমাদের চেনা পরিচিতি সাইট গুলো তে পাই না তখন গুগল থেকে সার্চ করে করে খুঁজে ডাউনলোড লিংক বের করি। তারপর যখন ডাউনলোড করি তখন দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে সেই ফাইল গুলোতে । যদি ফাইল গুলো তে ভাইরাস থাকে তাহলে আপনার ক্ষতি সাধন নিশ্চত। তাই অবশ্যই ফাইল ডাউনলোড করার সময় পরিচিত ওয়েবসাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করুন।
২। ভিপিএন ব্যবহার করা
ফাইল ডাউনলোড করার জন্য অনেক বন্ধুরা টরেন্ট ব্যবহার করে আর এই টরেন্ট ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ডাউনলোড করার সময় বা ব্রাউজ করার সময় ভিপিএন করা উচিত আর টরেন্ট সাইট গুলো এই বিষয়ে জোর দেয়। ইন্টারনেট থেকে নিজেকে গোপন রাখতে অনেক টা সহয়তা করে ভিপিএন গুলো যা হ্যাকারদের কাছে থেকে আপনার বাস্তব তথ্য গুলো গোপন রাখে। ইন্টারনেট ব্রাউজার করার সময় যেসব ওয়েবসাইট ততোটা সিকিউর মনে করেন না সেইসব ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করা আগে ভিপিএন কানেক্ট করে ব্রাউজ করবেন।
৩। পপ এডস থেকে সতর্ক
আমরা অনলাইন থেকে ফাইল ডাউলোড করার সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একটি বিষয় হয়তো খেয়াল করছেন যে কোন একটা ফাইল ডাউনলোড করার জন্য হাজার টা লিংক দেওয়া থাকে আবার সেই লিংক গুলো বা তার আশে পাশে ক্লিক করলে হুট করে অটো একটা নিউ ট্যাব ওপেন হয়ে অন্য ওয়েবসাইটে চলে যায়। যদি আপনি এই জিনিস টা খেয়াল করে থাকেন তাহলে এই বিষয় টা হলো পপ এড যে টা হুট করে আপনার অজান্তেই ক্লিক পড়ে অন্য সাইটে নিয়ে যায়। এই পপ এড গুলো বেশিভাগ মুভি ডাউনলোড ওয়েবসাইট গুলোতে দেখা যায়, এই পপ এডস গুলো তে যে সাইট গুলো দেওয়া থাকে সেই গুলোর কোন ভরসা নাই হুট হাট করে এডাল্ট সাইটে নিয়ে যায় আবার অপ্রয়োজনীয় কিছু এক্সটেনশন এড করতে বলে যা ক্ষতিকর হতে পারে তাই পপ এডস ওয়ালা সাইটে এড ব্লকার ব্যবহার করবেন বা পপ এড মারার সাথে সাথে কেটে দিবেন।
৪। অপ্রয়োজনীয় এক্সটেনশন এড করা থেকে বিরত থাকা
বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় দেখা যায় পপ এডস এর কারণে নতুন একটা ট্যাবে বিভিন্ন ধরনের কাজের ক্রোম ব্রাউজার এক্সটেনশন এড করতে বলে সেই গুলো কখনোই এড করবেন না। এমন হতে পারে এটা আপনার জন্য ফাঁদ এক্সটেনশন টি গোপনে আপনার ডাটা পাঠিয়ে দিচ্ছে হ্যাকারের কাছে। যদি বিজ্ঞাপনের কারণে দেখা এক্সটেনশন টি আপনি প্রয়োজনীয় মনে করেন যে এমন এক্সটেনশন একটা আমার দরকার তাহলে ডাউনলোড করার আগে ঐ নাম দিয়ে ক্রোম ওয়েব স্টোর দেখবেন এক্সটেনশন টি আছে কি না। যদি এক্সটেনশন টি না থাকে তাহলে এবং খারাপ রিভিউট থাকে ডাটা চুরি অন্য কিছু বিষয় নিয়ে তাহলে এড করা থেক বিরত থাকুন।
৫। অ্যান্টিভাইরাস অন রাখুন
ইন্টারনেট ব্রাউজিং করার সময় ভিপিএন এর সাথে আপনার ভালো একটা এন্টিভাইরাস থাকা আবশ্যক কারণ যদি ব্রাউজিং করা সময় যদি কোন ভাইরাস যুক্ত ফাইল ডাউনলোড হয় সেটি ব্লক করে দিব এন্টিভাইরাস। অ্যান্টিভাইরাস হিসাবে উইন্ডোজ ডিফেনডার যথেষ্ট আছে আর আপনার যদি উইন্ডোজ সেভেন হয় তাহলে আলাদ কোন ভালো অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল রাখবেন। কম্পিউটার বিভিন্ন সফটওয়্যার আমাদের কিনতে হয় কিন্তু আমরা তা না কিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্রি ডাউনলোড করে ব্যবহার করি আর সেইসব সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় অ্যান্টিভাইরাস অন থাকলে তা নষ্ট করে ফেলে সেই ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস অফ করতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য। কিন্তু ঐ ফাইল টি যদি কোন চেনা পরিচিত ভালো ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে অবশ্যই অ্যান্টিভাইরাস অন রাখুন আর না হয় ঐ ফাইল টি ব্যবহার করা বন্ধু করুন।
৬। আপডেট ব্রাউজার ব্যবহার করা
অনলাইনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার জন্য ব্রাউজার গুলো পিছিয়ে নেই প্রায় জনপ্রিয় সকল ব্রাউজার গুলো প্রতিনিয়ত তো তাদের ব্রাউজার সিকিউরিটি বৃদ্ধি করছে প্রতি আপডেটে। যদি আপনার বর্তমান আগের ভার্সনের ব্রাউজারে কোন সমস্যা থাকে তা পরবর্তীতে তা ফিক্স করা হয়ে থাকে। আমরা ক্রোম ব্রাউজার থেকে কিছু ডাউনলোড করতে গেলে মাঝে মাঝে দেখতে পাই ফাইল টা কে Danger File বলছে , আর আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করছে আপনি কি এই ফাইল টা আপনার ডিভাইসে রাখতে চান যদি আপনি সম্মতি দেন তাহলে সেই ফাইল ডাউনলোড শেষ হলে থাকে আর না হয় কানসেল হয়ে যায়। তাই প্রতিনিয়ত আপনার ব্রাউজার কে আপডেট রাখুন নিজের নিরাপত্তার জন্য।
৭। ফাইল ভাইরাস স্কান করুন
অনেক সময় কোন ফাইলের মধ্যে ভাইরাস আছে নাকি তা ডাউনলোড করার আগে ডাউনলোড ফাইলের ইউআরএল দিয়ে আপনি চেক করতে পারেন যে ফাইলের মধ্যে কোন ভাইরাস আছে কিনা। অথবা ফাইল টি ডাউলোড করাই আছে কিন্তু আপনি চেক করতে চাচ্ছেন এর মধ্যে ভাইরাস আছে কিনা তাহলে Virustotal.com এই ওয়েবসাইট টি ব্যবহার করতে পারেন।
৮। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সতর্কতা
প্লে স্টোরের অনেক প্রো সফটওয়্যার গুলো কিনতে হয় বলে অনেকেই এই সফটওয়্যার গুলো ফ্রি তে ডাউনলোড করার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার এতে মাঝে মধ্যে দেখা যায় ভুল একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড হয়ে গেছে যা ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনি যে অ্যাপ টি চাচ্ছেন সেটি ঐ অ্যাপ না তাহলে সাথে সাথে ফোন থেকে সেটি ডিলিট করে দিন এবং ইন্সটল থেকে বিরত থাকুন। আর অবশ্যই আপনার ফোনের সেটিং গিয়ে অ্যাপ ম্যানেজারে দেখবেন আপনি ইন্সটল করেন অথচ অন্য কোন অ্যাপ ইন্সটল হয়ে বসে আছে কিনা যদি থাকে তাহলে অবশ্যই আনইন্সটল করুন। কারণ এইগুলো স্পাই অ্যাপ ও হতে পারে যা আপনার কাছে থেকে বিভিন্ন পারমিশন নিয়ে হ্যাকারের কাছে আপনার তথ্য আপনার অজানতেই পাঠিয়ে দিচ্ছে।
৯। ফাইল সাইজ লক্ষ্য করুন
অনেক সময় ফাইল ডাউনলোড করার সময় আমরা যে ফাইল টি চাচ্ছি সেটি ডাউনলোড না হয়ে অন্য অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডাউনলোড হয়ে যায় যা হতে পারে ভাইরাস আক্রান্ত ফাইল, কোন কী লগার হয়ে থাকতে পারে। তাই অবশ্যই ডাউনলোড করার সময় আপনার মূল ফাইলের সাইজ কত দেওয়া আর আপনার যে ফাইল টি ডাউনলোড করছেন সেটির সাইজ একই কি না।
১০। নিজের সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করুন
আপনার নিরাপত্তা আপনার কাছে আপনাকে হাজার টিপস দেওয়ার পর যদি আপনি অসতকর্তার দিকেই ঝুঁকে পড়েন তাহলে কিছু করার থাকবে না। তাই নিজের সতর্ক হন যেটা করছেন সেটা করলে কি হতে পারে এবং কি পারে না ।
আশা করি আজকের এই পোস্ট আপনাদের অনলাইন যাত্রা একটু হলেও নিরাপদ হতে সাহায্য করবে। আপনার উপরের টপিক বাদে আর কোন বিষয়ে ফাইল ডাউনলোড করার সময় খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে হয়ে সেটি কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ
আরো পড়ুনঃ
আপনার ডিজাইন করা স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট ফ্রিতে হোস্টিং করুন। Netlify Tutorial-01
নতুন করে উইন্ডোজ দেওয়ার পরে করনীয় বিষয় গুলো কি কি?
উইন্ডোজ সেটআপ করার আগে যেসব কাজ অবশ্যই করা উচিত!
ব্যাটারি সেভার অ্যাপ গুলো কি সত্যিই কাজ করে? ব্যাটারি সেভ করার উপায়।
কম্পিউটারে স্ক্রিনশট কিভাবে নিতে হয়? স্ক্রিনশট নেওয়ার ৩টি উপায়।
আমাদের ফেসুবক পেজঃ ProjuktirKotha.Com – Facebook Page
Leave a Reply